বাবা-মায়ের সামনে পুড়ে মারা গেল পিয়াস

একমাত্র সন্তান আগুনে পুড়ছে। পাশের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সেই দুঃসহ দৃশ্য দেখতে হলো মা-বাবাকে। আগুনের কুণ্ডলীর মধ্যে সন্তান বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে। ‘বাবা আমাকে বাঁচাও.. বাঁচাও..।’ লোহার গ্রিলের ভেতরে হাতের নাগালেই প্রিয়মুখ, প্রিয় সন্তান। একটু একটু করে ঝলসে যাচ্ছে সন্তানের মায়াভরা মুখ। কিন্তু আগুন থেকে সন্তানকে বাঁচাতে অসহায় মা-বাবার করার কিছুই ছিল না। সন্তানের রুমের দরজা বাইরে থেকে খোলা যাচ্ছিল না কিছুতেই। আগুনে পুড়ে মা-বাবার সামনেই এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় সন্তান।

মর্মান্তিক ঘটনাটি গতকাল ভোরে আফতাব নগরের বি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের ৪৪/৪৬ নম্বর বাড়ির ১০ তলার ফ্ল্যাটের। নিহত যুবক স্বপ্নিল আহমেদ পিয়াস (২৬) সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর পুত্র। বাবা-মায়ের সঙ্গে ওই বাসাতেই থাকতেন স্বপ্নিল। গতকাল ভোরে হঠ্যাৎ করে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় পিয়াসের বাবা-মা’র। তারা পিয়াসের রুমের সামনে গিয়ে দেখেন, রুমে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। শরীরে আগুন নিয়ে বাঁচার জন্য ভেতর থেকে আকুতি জানাচ্ছে পিয়াস। কিন্তু শত চেষ্টা করেও একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু।

ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট প্রায় পৌনে এক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের (এসি) কম্প্রেসার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু মাথায় আঘাত পেয়েছেন। জানা গেছে, পিয়াস একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছেন। একটি কোম্পানীতে চাকরি করতেন।
সাংবাদিক নান্নু জানান, ভোরে বিকট শব্দে আমার ও আমার স্ত্রীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। উঠে দেখি, পুরো ঘর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। লাইট জ্বালিয়ে ছেলের রুমের সামনে গিয়ে দেখি, রুমের ভিতর আগুন জ্বলছে।

ছেলে ভিতর থেকে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছে। কিন্তু রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকায় আমরা ঢুকতে পারছিলাম না। আগুনের তাপ সইতে না পেরে পিয়াস তার রুমের ব্যালকনিতে অবস্থান নেয়। এরই মধ্যে তার গেঞ্জিতে আগুন লেগে যায়। সে আরো চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু আগুনের জন্য দরজা খুলতে পারছিল না পিয়াস। আমরা বাহির থেকে পিয়াসকে গায়ের গেঞ্জি খুলে ফেলতে বলি। আর বাসায় থাকা ফায়ার এক্সটিংগুইশার গ্যাস রুমে ও বেলকুনিতে ছিটাতে থাকি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছিল না। ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে আমার। শ্বাস নিতে একবার রুমের বাইরে আবার ভিতরে যাচ্ছিলাম। অন্ধকারে কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। একপর্যায়ে টেবিলের উপর পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান নান্নু। পরে তাকে ও তার ছেলেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সকাল ৭টার দিকে পিয়াসকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে বাড্ডার আফতাব নগরে জানাযা শেষে গ্রামের বাড়ি যশোরে নিয়ে যাওয়া হয়।

অপরদিকে, ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রাসেল শিকদার জানান, গতকাল সকাল ৯টার দিকে আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ের ৫ তলা ভবনের ৩য় তলার সম্মেলন কক্ষে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট পৌনে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খান রচি জানান, আগুনে মূল্যবান কাগজপত্রসহ ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে, এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।